উনিশ শতকে চার্লস ডারউইন যখন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ On the Origin of Species প্রকাশ করেন, তখনও বিবর্তন তত্ত্ব কেবল একটা অনুকল্পরূপে ছিল। আজ প্রায় দেড়শো বছর পর বিবর্তন তত্ত্ব একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
“বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব” বা Scientific Theory ব্যাপারটা আসলে কি?
সাধারণভাবে “তত্ত্ব” কথাটাকে যতো হালকা ভাবে নেয়া হয়, বিজ্ঞানের বেলায় ঠিক ততোটাই ভারী একটা ব্যাপার সেটা। কোনও প্রাকৃতিক ঘটনার সর্বোচ্চ সঠিক ব্যাখ্যা।
দ্যা স্ট্যানফোর্ড এনসাক্লোপিডিয়া অব ফিলোসোফির ভাষ্যমতে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হচ্ছে, “A scientific theory is an explanation of an aspect of the natural world and universe that can be repeatedly tested and verified in accordance with the scientific method, using accepted protocols of observation, measurement, and evaluation of results. Where possible, theories are tested under controlled conditions in an experiment.” (১)
আরেকটু সহজ করে বললে, “(বারবার) পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হাইপোথিসিসকেই থিওরি বলে।” কোনও অনুকল্প বা হাইপোথিসিস বার বার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হওয়ার পরপরই কেবল সেটা “থিওরীর” মর্যাদা পায়। কোনও হাইপোথিসিস অপ্রমাণিত হলে বিজ্ঞানের কোনও দায় পড়ে না তাকে কোলে নিয়ে বসে থাকার। এমন উদাহরণ অসংখ্য। স্টিফেন হকিং তার বিখ্যাত “A Brief History of Time” গ্রন্থে খুব সুন্দরভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে, “একটা তত্ত্বকে ভাল তত্ত্ব বলা যেতে পারে যদি সে তত্ত্ব দুটি প্রয়োজন সিদ্ধ করে। অল্প কিছু স্বীকৃত নিয়মের ভিত্তিতে দাঁড় করানো কোনও মডেল যদি পর্যবেক্ষণের একটা বিরাট অংশকে নির্ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা যায়; এবং যদি সেখান থেকে ভবিষ্যৎ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কেও নিশ্চিত ও নির্ভুল ভবিষ্যৎবাণী করা যায়।”
বিবর্তন তত্ত্ব তেমনি এক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স এর ভাষ্যমতে, “বিজ্ঞানীরা প্রায়শই পর্যবেক্ষণ বর্ণনা করতে “সত্য” শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে তাঁরা সত্যকে এমন কোনও কিছু বোঝাতে ব্যবহার করতে পারেন যা এতবার পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যে আরও পরীক্ষা করা বা প্রয়োগের প্রয়োজন থাকে না। এই অর্থে প্রজাতির বিবর্তনের ঘটনাটি একটি সত্য। বংশগতীয় পরিবর্তন আদৌ হয় কি না সেটা আজ আর প্রশ্ন কিংবা দ্বিধার আওতায় নেই, কারণ এর পক্ষে খুবই জোরালো প্রমাণ রয়েছে।”
একই সুরে বলেছেন হারমান জোসেফ মুলার। তাঁর “One Hundred Years Without Darwinism are Enough” প্রবন্ধের শেষ দিকে বলেছেন, “ভাবনা, অনুমান, তত্ত্ব, নীতি এবং সত্যের মধ্যে কোন সূক্ষ্ম পার্থক্য নেই। তবে, ধারণাটির সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য থাকে। যখন আমরা কোনও জিনিসকে সত্য বলি, তার অর্থ হলো এর সম্ভাবনা অত্যধিক — এতটাই বেশি যে আমরা এটি সম্পর্কে আমাদের কোনও সন্দেহ থাকে না এবং সেটি মেনে নিই। এখন সত্যের এরকম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একদম সঠিক বিষয় হচ্ছে, বিবর্তন তত্ত্ব একটি সত্য বা ফ্যাক্ট।” (২)
এ ব্যাপারে দ্যা প্যালিওন্টোলজিকাল সোসাইটির বক্তব্য আরও স্পষ্ট—
“বিবর্তন তত্ত্বকে একটি “সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট” ও “বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব” দুটোই বলা হয়।
বিবর্তন তত্ত্ব “প্রকৃতির এক বাস্তবতা” বা “ফ্যাক্ট” এই অর্থেই যে, জীবের জীবন প্রতি মুহুর্তেই পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রকৃতিতে প্রজাতি সমূহের বৈশিষ্ট্যাবলী প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হয়ে চলছে এবং নতুন নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটছে। জীবাশ্ম রেকর্ড হচ্ছে বিবর্তন তত্ত্বের প্রাথমিক পর্যায়ের এক প্রমাণ। বিবর্তন তত্ত্বকে আরও জোরালো ভাবে ব্যাখ্যা ও প্রমাণ করতে পেরেছে বৈজ্ঞানিক আরও নানান ক্ষেত্র যেমন— তুলনামূলক শারীরস্থানবিদ্যা (comparative anatomy), বায়োজিওগ্রাফি, জেনেটিক্স, মলিকিউলার বায়োলজি ইত্যাদি। ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া সহ অন্যান্য অনুজীবের প্রকৃতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ নিয়ে গবেষণাও বিবর্তন তত্ত্বকে প্রমাণ করে।
অন্যদিকে, বিবর্তন তত্ত্বকে একটা “তত্ত্ব” বলা হচ্ছে এ কারণেই যে— এটি পৃথিবীর ইতিহাসজুড়ে ঘটা জীবের জীবনের পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করে। এই তত্ত্বকে নানানভাবে অসংখ্যবার পরীক্ষা করা হয়েছে এবং সবসময়ই নিশ্চিত হওয়া গেছে এর সত্যতা। আরও স্পষ্ট করে বললে, বিবর্তন তত্ত্ব এমন একটা পরিচ্ছন্ন তত্ত্ব, যেটা জিওলজিকাল টাইমে পৃথিবীর ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করতে পেরেছে। জীবজগতের বংশগতীয়, আণবিক ও শারীরিক সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা সহ পেরেছে পুরো জীবজগতের বৈচিত্র্যতা ব্যাখ্যা করতে। বিবর্তনীয় প্রিন্সিপালগুলি হচ্ছে বেসিক ও অ্যাপ্লাইড বায়োলজি, জীবাশ্মবিদ্যা, বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণার মূল ভিত্তি।” (৩)
প্রতিনিয়তই বিবর্তন তত্ত্ব ব্যবহার করে ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার প্রকৃতি নির্ধারণ ও এদের সংক্রমণের ফলে সৃষ্টি রোগের প্রতিষেধক বানানো হচ্ছে। এই তত্ত্ব ব্যবহার করে অভয়ারণ্য নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জিনতত্ত্ববিদেরা বিবর্তন তত্ত্ব ব্যবহার করে আমাদের জিনোমের তথ্য উদঘাটন করছেন। বর্তমান সময়ে গবেষনাকারীরা এক নতুন ধরনের জীনতত্ত্ব বা ইভো ডেভো(Evo-Devo) ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অর্গানিজমের মধ্যে বিবর্তন প্রক্রিয়া ট্রেস করতে পারেন। এই প্রত্যেকটি ব্যবহারিক দিকই হলো বিবর্তনের জন্য এক একটি পরীক্ষা। কারণ, যদি ব্যবহারিক দিকগুলো অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হয় তবে বিবর্তন তত্ত্ব-ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। কিন্তু বিবর্তন তত্ত্ব একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী তত্ত্ব হিসাবে সময়ের পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে কালোত্তীর্ণ হতে পেরেছে। (৪)
বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সম্পর্কে আরেকটা ব্যাপার পরিষ্কার করি। কোনওকিছু “বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব” হিসেবে তখনই স্বীকৃতি পায়, যখন এটি চারটি শর্ত মেনে চলে৷
শর্ত চারটি হচ্ছে:
(১)মিথ্যা–প্রতিপাদনযোগ্যতা (Falsifiability),
(২)পর্যবেক্ষণযোগ্যতা (Observability),
(৩)পুনরাবৃত্তিযোগ্যতা (Repeatability),
(৪)পূর্বাভাসযোগ্যতা (Predictability)
পৃথিবীতে যে কয়টি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আছে, সবগুলিই এ চারটি শর্ত মেনে তবেই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হওয়ার মর্যাদা পেয়েছে। (৫)
মিথ্যা–প্রতিপাদনযোগ্যতা শর্তটার দিকে তাকানো যাক—কোনও তত্ত্বকে অবশ্যই এ শর্তের আওতায় থাকতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি যদি কোনওভাবে দেখাতে পারেন, আলোর চেয়ে বেশি গতির কোনওকিছু আছে মহাবিশ্বে। তাহলে থিওরি অব রিলেটিভিটির মতো একটা তত্ত্বকে নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। যদি কখনও দেখাতে পারেন, গাছ থেকে আম মাটিতে না পড়ে হুট করেই আকাশে উড়ে গেছে কোনও প্রকার বাহ্যিক বল প্রয়োগ ছাড়াই—তাহলেও মহাকর্ষ তত্ত্বকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। অর্থাৎ, প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করা এ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলির অবশ্যই মিথ্যা–প্রতিপাদনযোগ্যতা থাকতে হবে। যেটা বিবর্তন তত্ত্বের আছে।
পর্যবেক্ষণযোগ্যতা হচ্ছে, এ তত্ত্বটি যেন পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়। আবার, পুনরাবৃত্তিযোগ্যতা হচ্ছে, প্রতিবার পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যেন একই ফলাফল আসে। মানে, একটা তত্ত্বের মেকানিজম সমূহকে যতোবারই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হোক না কেন, তার ফলাফল একই হতে হবে। যদি না হয়, তাহলে ভাগাড়ে ফেলা হবে। সবশেষে আসে, পূর্বাভাসযোগ্যতা বা সহজ ভাষায়, ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। একটা তত্ত্বকে অবশ্যই এ ক্ষমতা থাকতে হবে। যেমন, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব থেকে কৃষ্ণ-গহ্বরের অস্তিত্ব থাকার একটা ভবিষ্যদ্বাণী এসেছে। আজকে সেটা প্রমাণিত। প্রতিটা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বরই এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিবর্তন তত্ত্বের কি সে ক্ষমতা আছে?
অবশ্যই আছে। বলা হয়েছিল মানুষ ও শিম্পাঞ্জি একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। তাই হলো, জেনেটিক্যালি ৯৬% সাদৃশ্যতা সহ আরও নানান প্রকার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। উভয়ের ক্রোমোজমের একই স্থানে পাওয়া গেছে HERV, একই স্থানে পাওয়া গেছে ন্যানোগ প্রোটিন জিন; মানব ক্রোমোজম-২ এর ফিউসন থেকে, Foxp2 জিন থেকে—অসংখ্যভাবে এর প্রমাণ মিলেছে!(৬) প্রমাণ মিলেছে পাখি ও স্তন্যপায়ীদের একই পূর্বপুরুষদের আসার মতো ভবিষ্যদ্বাণী।(৭)
এরকম অসংখ্য ভবিষ্যদ্বাণীর পরিক্ষিত প্রমাণ আজকে আমাদের হাতের কাছে।(৮)
কোয়ান্টাম তত্ত্ব, পারমাণবিক তত্ত্ব, আপেক্ষিকতার তত্ত্ব, মহাকর্ষ তত্ত্ব, প্লেট টেকটনিক্স তত্ত্ব, বংশগতীয় তত্ত্ব সহ বিজ্ঞানের সব প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের মতো বিবর্তন তত্ত্বও উপরোল্লিখিত চারটি শর্ত মেনেই একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হওয়ার মর্যাদা পেয়েছে। শুধু তাই না, এখন পর্যন্ত এই তত্ত্বের মেকানিজমগুলিরই সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই হয়েছে। বিবর্তন নিয়ে কি পরিমাণ গবেষণা হয়, সে ব্যাপারে আপনাদের একটু ধারণা দিই—শুধুমাত্র বিবর্তন তত্ত্ব নিয়েই পৃথিবীতে ৩০০টি জীববিজ্ঞান জার্নাল পেপার প্রকাশ করে যাচ্ছে। আজ অবধি কেবল এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটির-ই ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার পেপার পাবলিশ হয়েছে। একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ইম্পেক্ট ফ্যাক্টরের জার্নাল হচ্ছে, Nature Reviews Molecular Cell Biology, যার ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর ৯৪.৪৪। যেখানে কোনও জার্নালের ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর মোটামুটি ১০ ধরলেই সেটাকে excellent quality ধরা হয়। প্রতিবছর শুধু বিবর্তন তত্ত্ব নিয়েই স্বতন্ত্রভাবে শত শত গবেষণা প্রকাশিত হয় পৃথিবীর এই সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জার্নাল থেকে।(৯)
এরপরও এমন প্রতিষ্ঠিত সায়েন্টিফিক তত্ত্বকে এক কথায় “স্রেফ একটা মতবাদ” যদি বলে বসেন, এ ব্যর্থতা আপনারই। আপনারই বোধশক্তির চরম সীমাবদ্ধতা। আপনারই পড়াশোনার ঘাটতি। বিখ্যাত বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী আর্নেস্ট মায়ারের ভাষ্যে, “বিবর্তন তত্ত্বের ভিত্তি এতোটাই নিশ্চিত যে প্রায় সব জীববিজ্ঞানী বিবর্তন তত্ত্বকে একটি “ফ্যাক্ট” হিসেবে বিবেচনা করেন। বিবর্তন তত্ত্বের ভিত্তি এতোটাই নিশ্চিত যে প্রায় সব জীববিজ্ঞানী বিবর্তন তত্ত্বকে একটি “ফ্যাক্ট” হিসেবে বিবেচনা করেন।” (১০)
দেখুন, একুশ শতকের বিজ্ঞানের স্ট্রাকচারই এরকম যে, এখানে বিবর্তন ছাড়া অন্য কোন তত্ত্ব আসার প্রশ্নই আসে না। কিভাবে এলাম আমরা, কেন বিভিন্ন প্রাইমেটদের একই রোগ জীবাণু আক্রমণের দীর্ঘ হিস্ট্রি, এতো এতো ট্রানজিসনাল ফসিলের কিসের যোগসূত্র ইঙ্গিত করে, কেন ব্যাক্টেরিয়ারা রেজিস্ট্যান্ট হয়, কেনই বা আমাদের শরীরে এখনও রয়ে গেছে এমবিওটদের(পাখি, সরীসৃপ) ভগ্ন জিন ভিটেলোজেনিন, কেনই বা আমাদের দ্বিতীয় ক্রোমোজম ফিউজ, আমাদের অতীত, ভূত-ভবিষ্যৎ—সবকিছুর উত্তর পূণ্যশ্লোকের কোনও কিতাবে কখনও পাওয়া যাবে না। যেতে হবে বিজ্ঞানের কাছে। বিজ্ঞান এ সবকিছুর উত্তর যে তত্ত্বের মাধ্যমে এস্টাব্লিশ করেছে, সেটা এই থিওরি অব ইভোলিউশন।
বিবর্তন মানে কী? বিবর্তন মানে descent with modification- এক জীবের পপুলেশানে পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্য জীবের আবির্ভাব। এখন ধরে নিন কেউ বলছেন- কোন এক প্রজাতির ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব ভুল। এই কথাটার মানে কী? এই কথাটার মানে এই প্রজাতিটা অন্য কোন জীব থেকে আসেনি। তার মানে কোথা থেকে এসেছে? হয় হাওয়া থেকে কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই আপনাআপনি তৈরি হয়েছে, অথবা (সচরাচর মানুষ যেটা ইমপ্লাই করে) অলৌকিক কোন উপায়ে এসেছে। আজকের দিনের বিজ্ঞানের গোড়ার কথাই হচ্ছে লৌকিক কার্যকারণের ভিত্তিতে সবকিছু ব্যাখ্যা করা। আপনি যদি আপনার আমার অরিজিনকে কোনও ‘বিশ্বাস’ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চান। আমার তাতে আপত্তি নেই। বিশ্বাস, তার নিজের জায়গায়।
আমি সোজা কথায় বলি, কেন ভূমিকম্প হয়, সেটুকুর empirical আর সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা আপনি জানতে চাইলে কোথা থেকে জানতে হবে?
সেটা জানতে আপনাকে ‘প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব’ নামে বিজ্ঞানের এক প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের দ্বারস্থ হতে হবে। বিকল্প, প্রমাণিত কোনও ব্যাখ্যা নেই।
একই ভাবে আমাদের মানুষ হিসেবে আবির্ভাবের ব্যাখ্যা বিজ্ঞান দিয়ে জানতে কেবল এবং কেবল মাত্রই “থিওরি অব ইভোলিউশন” এর দ্বারস্থ হতে হবে। এরচেয়ে আর কোনও ওয়েল এস্টাব্লিশড তত্ত্ব বিজ্ঞানে নেই। বাচ্চাদের প্লেট টেকটোনিক তত্ত্ব পড়ানো ক্ষতিকর না হলে ইভোলিউশন পড়াতেও ক্ষতি দেখি না। নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে বিজ্ঞানের জায়গাটা কোথায়, এটুকু জানার অধিকার সব মানুষের আছে।
আমাদের তৃতীয় বিশ্বের এই বিজ্ঞান না জানা স্বল্পশিক্ষিত মানুষের কাছে তুড়ি মেরে বিজ্ঞান নিয়ে মিথ্যাচার করা সহজ হতে পারে। কিন্তু এতে করে বিজ্ঞানের এস্টাব্লিসড কোনওকিছুকে আনএস্টাব্লিস করা যায় না। নাসার ওয়েবসাইটে উঁকি দিয়ে দেখে আসুন না, Life এর বিজ্ঞানভিত্তিক ডেফিনিশন হিসেবে কি ফিক্স করল তারা। তাদের ভাষ্যে, “Life is a self-sustaining chemical system capable of Darwinian evolution”. (১১)
এই সেদিনও, ২০২২ সালে সুইডিশ গবেষক সাভান্তে পাবো নোবেল পেলেন, মানুষেরই আরেক প্রজাতি নিয়ান্ডারথালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করে। ২০১০ বিশ্ববিখ্যাত Science জার্নালে (ইম্পেক্ট ফ্যাক্টর ৬৩.৭১) তাঁর এ কাজটি প্রকাশিত হয়। এরপরের সুদীর্ঘ এক যুগের রিভিউয়ের পর তাঁর এ সম্মাননা। শুধু তাই না, এ নোবেল লরিয়েট একই গবেষণায় মানুষ এবং পূর্ববর্তী হোমিনিন পূর্বপুরুষদের জিন ট্রান্সফারের ব্যাপারটিও প্রমাণ করেছেন। এ ব্যাপারে তাদের ওয়েবসাইটে নীচের লিংকে দেয়া আর্টিকেলটায় চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। (১২)
তাই বলছি, কোনও এস্টাব্লিশড সায়েন্টিফিক তত্ত্বকে অস্বীকার করা, মানুষকে মিসলীড করাটা মোটেও ঠিক না। আমি সেটাকে মোরালি ইনকারেক্ট-ই ভাবি। বিশ্বাস থাকুক বিশ্বাসের জায়গায়। আমরা সেটাকে নাহয় নিজের মতো করে ধারণ করে চলি। আর বিজ্ঞান থাকুক বিজ্ঞানের জায়গায়। একটা আরেকটাকে স্পয়েল করে দিচ্ছে, এমনটা ভাবতেই হবে কেন বলুন?
তথ্যসূত্রঃ
(১) "The Structure of Scientific Theories". The Stanford Encyclopedia of Philosophy. Metaphysics Research Lab, Stanford University. 2016.
(২) Muller, Hermann Joseph (April 1959)। "One Hundred Years Without Darwinism Are Enough",
(৩) The Paleontological Society Position Statement: Evolution
(৪) Evolution: Fact and Theory | National Center for Science and Education.
(৫) Emergence and Modularity in Life Sciences, Lars Wegner, page-15
(৬) আত্মীয়তার প্রমাণাদি, মাহাথির আহমেদ তুষার | বিজ্ঞানব্লগ | প্রকাশকাল: ২ জুলাই, ২০২১
(৭) Brawand, D. Wahli, W., & Kaessmann, H.(2008). Loss of egg yolk genes in mammals and the origin of lactation and placentation. PLoS Biology, 6(3), e63.
(৮) Evolution Predictions | Talk Origin.
(৯) Updated List of High Journal Impact Factor Evolution Journal.
(১০) Mother, Ernst (198). Tiered a New Philosophy of Biology: Observations of Go Evolutionist. Cambridge.
(১১) https://astrobiology.nasa.gov/research/life-detection/about/#:~:text=The%20NASA%20definition%20of%20life,Organic%20Life%20in%20Planetary%20Systems
(১২) www.nobelprize.org/prizes/medicine/2022/advanced-information/